শওকত আলী
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়ে গেছে আ’লীগ ও বিরোধী দল-বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানা তৎপরতা। উভয় দলের নেতারা ঘন ঘন এলাকায় অবস্থান করছেন, সাংগঠনিক ও সামাজিক নানা কর্মকা-েও অংশ নিচ্ছেন। রমজানে স্হানে স্হানে ইফতার পার্টি করা ,ঈদের পূর্বে প্রতিযোগিতার ন্যায় জাকাত দেয়া, নেতা কর্মী ও সুধীজনদের মাঝে নানা উপহার সামগ্রী প্রদান সহ খোঁজ খবর নেয়া আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হচ্ছে। উভয় দলের ভেতরকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিরোধ থাকলেও এসব তৎপরতায় নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে। চাঁদপুরে ৫টি নির্বাচনী এলাকা। এই নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বর্তমানে আ’লীগের সাংসদরা রয়েছেন। এই ৫ জন এমপি গত নির্বাচনে আ’লীগের টিকেটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে তা বুঝা যাচ্ছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা দেখে। এ ক্ষেত্রে আ’লীগের প্রার্থীরা প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব প্রার্থীর অনেকেই নির্বাচনীয় এলাকায় বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ, মতবিনিময়সহ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
চাঁদপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রায় প্রতি সপ্তাহে এলাকায় বিভিন্ন কর্মকা-ে যোগ দিচ্ছেন। এ আসনে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ হোসেন, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ এসএম সহিদুল ইসলাম এবং বিএনপির সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল মিলন, মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ও সাবেক এমপি রফিকুল ইসলাম রনির সহধর্মিণী শামিমা আক্তার রনির নাম শুনা যাচ্ছে।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) আসনে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাবেক এমপি বিমান বাহিনীর প্রধান রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা নুরুল আমিন রুহুলের নাম শুনা যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এমএ শুক্কুর পাটওয়ারীর নাম শুনা যাচ্ছে।
চাঁদপুর-৩ আসনে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বর্তমান জেলা আ’লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু ও সাবেক এমপি জিএম ফজলুল হকের নাম শুনা যাচ্ছে।
চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে আ’লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ও জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোঃ শামছুল হক ভূইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শফিকুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপিত অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ডাঃ হারুনুর রশিদ সাগর এবং বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় নেতা লায়ন হারুনুর রশিদ, শিল্পপতি এম এ হান্নান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারীর নাম শুনা যাচ্ছে।
চাঁদপুর-৫ আসনে (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান সাংসদ মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, বর্তমান সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ অ্যাড. নুরজাহান বেগম মুক্তা, পাওয়ার সেলের ডিজি প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেনের নাম শুনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক সাংসদ এম এ মতিন ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এমএ হালিম টিটুর নাম শুনা যাচ্ছে।
প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বড় দুটি দলেই গ্রুপিং, কোন্দল রয়েছে। কোন কোন এলাকায় দ্বন্দ্ব গ্রুপিং অনেকটা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ এসব দ্বন্দ্বকে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। অবশ্য কিছুদিন আগে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির এমএ মতিন ও ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের মীমাংসা হয়ে হাতে হাত মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। দিন যতই যাচ্ছে চাঁদপুরে ৫টি নির্বাচনী এলাকায় অনেকটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে চেহলাম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে মতলব উত্তরে বিএনপি নেতা আতাউর রহমান ঢালীর গাড়ির বহরে এবং কচুয়ায় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী গোলাম হোসেন এক আত্মীয়ের চেহলাম অনুষ্ঠান শেষ করে নিজ বাড়ি ফেরার পথে তার গাড়ির বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুর জেলা সদরে দ্বন্দ্ব গ্রুপিংয়ের কারণে শহর আ’লীগের সভা প- হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রমজানের ৩-৪ দিন আগে কেন্দ্রীয় বিএনপি কার্যালয়ে জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে হাতহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ঐক্যমতে পৌছতে না পারায় ইতিমধ্যে গত ২০ মে চাঁদপুর জেলা বিএনপির যে বর্ধিত সভা হওয়ার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বড় দুটি দলে নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব দেখা দিলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল হয়ে যে উঠছে তা সাম্প্রতিককালের নানা তৎপরতায় বুঝা যাচ্ছে। তবে এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্বাবনা লক্ষ্য করা যাচেছ। অভিজ্ঞ মহলের মতে এ ব্যাপারে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে।