কঠোর নিরাপত্তা, শিক্ষামন্ত্রীর শক্ত পদক্ষেপ আর কড়া হুশিয়ারিতেও কোনো কাজ হয়নি; এবারও এসএসসি পরীক্ষা শুরম্নর দিনই বাংলা প্রথমপত্র প্রশ্ন ফাঁস হলো।
আগের মতো এবারও প্রশ্ন এসেছে ফেসবুকে এবং তা পরীক্ষা শুরম্নর আধা ঘণ্টা আগে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দুপুর ১টায় শেষ হওয়ার পর পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফেসবুকে আসা প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। বিষয়টি জানানো হলেও শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথা মানতে নারাজ।
বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এসএসসিতে এবার অভিন্ন প্রশ্নপত্রে হচ্ছে সব বোর্ডের পরীক্ষা।
গত বছর এসএসসির পর জেএসসি এমনকি প্রাথমিক সমাপনীর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরম্নল ইসলাম নাহিদ গত কিছু দিন ধরে কড়া হুশিয়ারি দিচ্ছিলেন।
কিন্তু গতকাল পরীক্ষা শুরম্নর আধা ঘণ্টা থেকে ২৫ মিনিট আগে একাধিক ফেসবুক ও মেসেঞ্জার গ্রম্নপে উত্তরসহ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পাওয়া যায়।
পরীক্ষা শুরম্নর ঠিক ২৪ মিনিট আগে ‘@@@@ নধহমষধ ২হফ চধঢ়বৎ @@@@@’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রম্নপে ইমেজ আকারে আসে বাংলা প্রথমপত্র ‘খ’ সেট বহু নির্বাচনী প্রশ্ন। তা বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে মিলে যায়। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবার পরীক্ষা শুরম্নর আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হলেও তাতে শৈথিল্যই দেখা গেছে।
সকালে পরীক্ষা শুরম্নর আগে সরকারি ল্যাবরেটরি বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ‘সব ধরনের পদক্ষেপ’ নেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বাতিল করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
নাহিদ বলেছিলেন, ‘আমরা খুবই ডেসপারেট, খুবই অ্যাগ্রেসিভ এ (প্রশ্ন ফাঁস) বিষয়ে। যদি কোথাও কেউ কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করে তিনি কোনোভাবেই রেহাই পাবেন না। কী হবে, আমিও সেটা ধারণা করতে পারি না। চরম একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমারকে জানালে তিনি বলেন, ‘নিউজ করতে চাইলে করেন যা ব্যবস্থা নেয়ার আগেই নিয়েছি। আমরা জানি প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।’
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আর কোনো মন্ত্মব্যই করতে রাজি হননি তিনি।
যেভাবে মিলল প্রশ্ন
‘চঝঈ ঙ্ ঔঝঈ ঙ্ ঝঝঈ ঙ্ ঐঝঈ ঊীধস ঐবষঢ়রহম ঈবহঃবৎ’ নামক একটি ফেসবুক গ্রম্নপে ১ ফেব্রম্নয়ারি রাত ১২টা ৪৯ মিনিটে ঝধফরধ ওংষধস ঝবঃঁ নামক ফেসবুক আইডি থেকে প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। পোস্টে লেখা হয় “ঝঝঈ ছ ২০১৮
ইঅঘএখঅ ১ঝঞ চঅচঊজ ঋজঊঊ ঞঊ উওইঙ
ঔঅউঊজ খঅএইঊ ওঘইঙঢ গঊ”
ওই ফেসবুক আইডিতে রাত ১২টা ৫০ মিনিটে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে “@@@@ নধহমষধ ২হফ চধঢ়বৎ @@@@@” নামক একটি মেসেঞ্জার গ্রম্নপে যুক্ত হতে বলা হয়।
গ্রম্নপে যুক্ত হওয়ার পর, সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে গউ ঞধসরস কযধহ নামক এক আইডি থেকে ‘খ’ সেটের প্রশ্নের ছবি দেয়া হয়। একই সঙ্গে হাতে লেখা দুটি উত্তরপত্রের ছবিও দেয়া হয়।
পরীক্ষা শেষে ঝধফরধ ওংষধস ঝবঃঁ নামের সেই ফেসবুক আইডি থেকে পরবর্তী প্রশ্ন ফাঁসের কথা জানিয়ে একটি মেসেজ পাঠানো হয়।
“শুনো সবাই, আজকে আমরা জাস্ট দেখলাম যে কাজ হবে কি না, এখন শিওর যে কাজ হবে। আর আজকে রাতে তোমাদের ৩ সেট রিটেন দিয়া দিমু ওইগুলা পড়লেই কমন আর গঈছ সকালে ৮.৩০ থেকে ৯.০০ টার মধ্যে আন্সারসহ দিমু।।।। আশা করি সবাই বুঝতে পারছো।।।।।।।।
প্রশ্ন মূল্য ৩০০/- মাত্র
প্রশ্ন নিতে চায়লে অউগওঞ ঈঅজউ ঊজ ছবি দেন
অথবা ২০০/- অউঠঅঘঈঊ”
মেসেঞ্জার গ্রম্নপ ছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রম্নপ ঘেঁটেও প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে। ‘চঝঈ ঔঝঈ ঝঝঈ ঐঝঈ জবধষ ছঁবংঃরড়হ ঙঁঃ অষষ ইড়ধৎফ ১০০% ঈড়সসড়হ’, ‘ঝঝঈ ছঁবংঃরড়হ ঙঁঃ্থ, ‘ঝঝঈ ছঁবংঃরড়হ ঙঁঃ ১০০% ঈড়সসড়হ অষষ ইউ ্ জবুঁষঃ ঈযধহমব ২০১৮+১৯+২০অষষ ইড়ধৎফ নামে ফেসবুক গ্রম্নপগুলোতেও প্রশ্ন ইমেজ আকারে পরীক্ষার আগেই দেয়া হয়েছে।
মিলে গেলে পরীক্ষা বাতিল
এদিকে এসএসসির ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে যদি আসল প্রশ্নপত্র মিলে যায় সেক্ষেত্রে পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ আরও বলেন, গোয়েন্দা পুলিশকে ফেসবুকের লিংক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ছড়ানো প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের মিল নেই। আমি মিলিয়ে দেখেছি। বিষয়টি মিথ্যা ও গুজব। তবে যে ব্যক্তি এই প্রশ্নটি পোস্ট করেছেন তার বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরম্ন করে দিয়েছে।’
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে পরীক্ষা শেষে রাজধানীর বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।
অনুপস্থিত ৯৭৪২ পরীক্ষার্থী
২০১৮ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার প্রথমদিনে সারাদেশের ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯ হাজার ৭৪২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এদিন বহিষ্কার হয়েছে ২৬ জন শিক্ষার্থী।
তিন হাজার ৪১২টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার থেকে শুরম্ন হওয়া পরীক্ষায় বসছে ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৯ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে ১০ লাখ ২৩ হাজার ২১২ জন ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭ জন।
প্রথমদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত্ম এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র, সহজ বাংলা প্রথমপত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব এবং কন্ট্রোল রম্নমের ইনচার্জ আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানান যায়।
এতে বলা হয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এক হাজার ৪৯৩ জন, চট্টগ্রামে ৪২০ জন, রাজশাহীতে ৬৪৩ জন, বরিশালে ৩১৫ জন, সিলেটে ৩৩৫ জন, দিনাজপুরে ৫২১ জন, কুমিলস্নায় ৫৪৩ জন, যশোরে ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
মাদ্রাসা বোর্ডের তিন হাজার ১৫৭ জন এবং কারিগরি বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল এক হাজার ৭২০ জন শিক্ষার্থী। এদিন ঢাকায় দুইজন, মাদ্রাসা বোর্ডে ১৭ জন এবং কারিগরিতে সাতজন শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে।
১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রম্নয়ারি তত্ত্বীয় বিষয়ের ২৪ দিনে ১৭ দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকালে ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেলে ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৬ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরম্ন হয়ে ৪ মার্চ শেষ হবে।
সূত্র-২/২/১৮ যায়যায় দিন পত্রিকা