স্টাফ রিপোর্টার ॥
চাঁদপুর নৌ পুলিশের উপস্থিতিতে হাজীগঞ্জের এক স্বর্ন ব্যবসায়ীর ৪৭ ভরি স্বর্ন ছিনতাই করার ঘটনা প্রধান অভিযুক্ত নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেনের নাম মামলায় অর্ন্তভুক্ত না করন ও একটি স্বর্নের ভার উদ্ধার করলেও সেই স্বর্নের হদিছ না মেলায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারফের খুটির জোড় কোথায় এ নিয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন।
ঘটনার পর দিন রবিবার কোড়ালিয়া এলাকায় সকাল ৯ টায় রাজনৈতিক দলের এক নেতার বাসায় অভিযুক্ত পলাশ তার মায়ের উপস্থিতিতে স্বর্নের ভারটি নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেনের হাতে দেওয়া হলেও উদ্ধারকৃত স্বর্নের ঘটনা প্রকাশ না করার ঘটনা প্রমান হলেও নৌ পুলিশের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন নৌ পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন যাবত নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের ভয়ে নৌ পুলিশ ফাড়ির অনান্য পুলিশ সদস্যরা মুখ খুলতে ভয় পায়। যদিও তার এ অপকর্মের প্রতিবাদ কেউ করে তাহলে তাকে বদলী হতে হয়। জানা গেছে ঐ উচ্চ পদস্থ নৌ পুলিশ কর্মকর্তার দেশের বাড়ি একই যায়গায়। ফলে মেঘনায় নানা অপকর্মের হোতা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন প্রতিবারই অপরাধ পার পেয়ে যায়। তেমনি চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ব্যবসায়ীর ৪৭ ভড়ি স্বর্ন ছিনতাইয়ের ঘটনায় নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেনের সরাসরি জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশনে যাচ্ছে না নৌ পুলিশ। যদিও মামলার বাদী রতন সেন নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেনকে মামলার প্রধান আসামী করে এজেহার লেখা হলেও অজ্ঞাত কারনে ৩বার এজেহার পরিবর্তনের পর অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামী করে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, রবিবার নৌ পুলিশের ইনচার্জ পলাশের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্নের বারটি সে মডেল থানা পুলিশকে না জানিয়ে নিজেকে অপরাধ থেকে বাচাতে গত বৃহস্পতিবার পলাশের দুসম্পর্কের এক চাচাতো ভাই কোড়ালিয়া এলাকার বাবুল বেপারীর ছেলে সোহেলের মাধ্যমে দুপুর ১টায় পলাশের বেডরুমে স্বর্নের বারটি রেখে আসার জন্য পাঠায়। সোহেল পলাশের বেডরুমে ঢুকে স্বর্নের ভাড়টি ওয়্যারড্রপের ২য় ড্রয়ারে রেখে চলে আসে। ঐ দিন রাতেই মোশারফের তথ্যনুযায়ী ডিবি পুলিশ ও মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বর্নের বারটি উদ্ধার করে।
এ ব্যপারে পলাশের মা আসমা বেগম জানায়, যে স্বর্নের বারটি টিসু পেচিয়ে পলাশ পুলিশ মোশারফকে দিয়েছে, সেই বারটি বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি পুলিশ বেডরুম থেকে উদ্ধার করেছে। সেই দিন দুপুরে সোহেল হঠাৎ আমাদের বাসায় আসে। এ সময় সে কোন কিছু না বলে পলাশের বেড রুমের দিকে যায়। তখন তাকে পলাশের বউ অসুস্থ বলে জানলেও সে কথা কর্নপাত না করে ভিতরে ঢুকে পরে।
স্বর্ন ছিনতাই হওয়ার পর থেকে পলাশ এ পর্যন্ত বাসায় আসেনি। তাহলে কিভাবে এ স্বর্ন আমার বাসায় আসলো। আমার ছেলে তো স্বর্ন দিয়ে দিয়েছে। সোহেলের মাধ্যমে পুলিশ মোশারফ নিজের দোষ ঢাকতে অভিনব কায়দায় স্বর্ন উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে।
এদিকে হাজীগঞ্জের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সেন শিল্পালয়ের মালিক রতন সেনের কাছ থেকে ৪৭ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত নৌ-পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের নাম এজাহারভুক্তকরন ও স্বর্ণ উদ্ধার সহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে হাজীগঞ্জ বাজার স্বর্ণ ব্যবসায়িদের উদ্দোগ্যে মৌন মিছিল, মানববন্ধন করেছে। ব্যাবসায়িরা দোকান বন্ধ রেখে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের হাজীগঞ্জ এলাকায় রাস্তার উপর প্রায় ১ঘন্টা প্রতিবাদ জানায়। এতো কিছু হওয়ার পরও নৌ পুলিশের টনক নড়েনি। বহাল তবিয়তে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন খুটির জোর কি এতই বেশি। নাকি পুলিশ বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না এমন হাজারো প্রশ্ন জনমনে ঘোড়পাক খাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৫জানুয়ারি শনিবার হাজীগঞ্জ বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ি, সেন শিল্পালয়ের স্বত্তাধীকারি রতন সেন ৪৭ভরি স্বর্ণ নিয়ে ঢাকার উদ্দোশ্যে যাওয়ার জন্য শনিবার সকাল ৯ টায় ঢাকাগামী ঈগল-১ লঞ্চে থেকে নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ ও সোর্স পরিচয়ে ৩ জন ভিতরে প্রবেশ স্বর্ন ছিনিয়ে নিয়ে মোশারফের ইশারায় লঞ্চ থেকে নেমে পরে। পরে পুলিশসহ সোর্সরা স্বর্ন ভাগাভাগি করে নেয়। এব্যাপারে রতন সেনের পক্ষে তার ভাই সুশেন সেন বাদি হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি দায়ের করেন। সেই ঘটনায় ডিবি পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় পলাশের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৪ ভরি ওজনের স্বর্নের ভার উদ্ধার করে। বাকি ভাগাভাগির স্বর্ন নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারফের কাছে এখনো রয়েছে।